ফল সংগ্রহে বিভিন্ন পদ্ধতি অনুশীলন

এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-২ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | | NCTB BOOK

প্রাসঙ্গিক তথ্য 

ফল বাগানের যথোপযুক্ত যত্নের উপর গাছের ফল ধরা, ফলের আকার বড় হওয়া ইত্যাদি বিষয় অনেকাংশে নির্ভর করে। আবার ফলের সংগ্রহ পদ্ধতির ওপর ফলের গুণাগুণ ও ফল সংরক্ষণ সময়কাল নির্ভর করে। সঠিক সময়ে ও সঠিক পদ্ধতিতে ফল সংগ্রহ করা না হলে ফলের বিক্রয়মূল্য কমে যায় এবং ফল বেশি সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায় না ।

ফল সংগ্রহ: 

ফল পাকা অবস্থা পর্যন্ত গাছে রেখে সংগ্রহ করলে ফল সর্বোৎকৃষ্ট অবস্থায় পৌঁছে। এতে রং ও আকৃতি ভাল হয় এবং স্বাদ পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করা যায়। তবে ফল কীভাবে ব্যবহার করা হবে, কতদূরে পাঠানো হবে, কতদিন রাখা হবে, রোগ, পোকামাকড়ের আক্রমণ, নিরাপত্তা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, ইত্যাদি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে ফল সংগ্রহের সময় নির্ধারণ করতে হয় । গাছের আকার, ফলের বোটা শক্ত বা নরম, বাজারের চাহিদা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে ফল সংগ্রহের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় ।

ফল সংগ্রহ পদ্ধতি: সতেজ ফল সাধারণত দু'ভাবে ভালো হয় । তবে অনেক সময় সাধারণ পদ্ধতি (নিচের ক ও খ) অপেক্ষা অন্য পদ্ধতিতেও ফল সংগ্রহ করা যায় । যথা 

(ক) হাত দিয়ে তোলা/পাড়া 

(খ) মেশিনের সাহায্যে তোলা / পাড়া 

(গ) পশুর সাহায্যে তোলা / পাড়া

ফল সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ 

১. ঝুড়ি (বাঁশের বা কাঠের) 

২. চাকু, কাঁচি, 

৩. সাকশন ক্যাপ 

৪. লম্বা বা ছোট হাতাওয়ালা লাঠির মাথায় বাঁধা থলে, 

৫. মই (সাধারণ বা ফোল্ডার) 

৬. চটের বা রশির জালির দোলনা, 

৭. পলিথিন, ক্যানভাস বা চটের ব্যাগ 

৮. রশি বা দড়ি

ফল ব্যবহারের উদ্দেশের ওপর নির্ভর করে ফল সংগ্রহ পদ্ধতি অনুশীলন করা হয় । যেমন-পাকা খাওয়া, জুস তৈরি, আচার বা চাটনি তৈরি, তরকারি খাওয়া বিদেশে রপ্তানি ইত্যাদি ।

ফল সংগ্রহের জন্য ফলের বাগানে বা গাছের নিকট যেতে হবে । তারপর গাছের ফল পাড়ার উপযুক্ত হয়েছে কি না তা দেখতে হবে । ফল পরিপুষ্ট হলে ফল গাছের উচ্চতা বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কিভাবে ফল সংগ্রহ করা যাবে ।

আম সংগ্রহঃ

(১) আম হাত দিয়ে বা লম্বা লাঠির মাথায় জালি/এলে বেঁধে পাড়তে হবে । 

(২) একজনে গাছ হতে আমের বোঁটা ছিড়ে দেবে। আর একজন নিচে বস্তা/খলে ধরে আমটিকে সরাসরি । মাটিতে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে মাটিতে গড়ায়ে দিবে। 

(৩) গাছে উঠে চটের থলেতে আম ছিড়ে ভর্তি করে রশির সাহায্যে খলে ঝুলিয়ে নিচে নামিয়ে দিতে হবে। 

(৪) গাছের পাশে মই দিয়ে দাঁড়ায়ে বা গাছে উঠে লম্বা লাঠির মাধার ছুরি বা কঁচি বাঁধা লাঠি দিয়ে বোটা কেটে দিতে হবে । আর ঠিক তার নিচে মশারি টানানারে মত রশির আলি রাখলে তাতে আম পড়বে এবং আঘাত কম পাবে।

পেঁপে সংগ্রহঃ 

(১) গাছ ছোট হলে হাতের নাগালের মধ্যে থাকা অবস্থায় হাতে হ্যান্ড গোব পরে ফল পাড়তে হবে । 

(২) পাছ লম্বা হলে মই দিয়ে উপরে উঠে বা লম্বা হাতাওয়ালা সাকসান কাপ-এর সাহায্যে পাড়তে হবে । 

(৩) পেঁপে পাড়ার সময় যাতে ঘষা না লাগে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে ।

কলা সংগ্ৰহঃ

(১) কলা পরিপুষ্ট হলে কলার কাঁদি একমুখ খোলা পলিথিন ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে । 

(২) কলার কাদির মাথার দিক হতে পলিব্যাগ পরায়ে দিয়ে খোলামুখ কাদির গোড়ার দিকে বেঁধে দিতে হবে । 

(৩) এর পর কলার কাঁদি কাটার সময় গাছের নিকট দুজন যেতে হবে। একজন কঁদি কেটে দিবে এবং আর একজন নিচে দাঁড়ায়ে কাঁদি ধরবে । 

(৪) গাছ বড় হলে কলার কাদির নিচে হুক আকারে বাধা বাঁশ দিয়ে ঠেকা দিতে হবে। তারপর কঁদি যে দিক ঝুলে আছে তার বিপরীত দিকে গাছের কাণ্ডে মাটি হতে ১০০ থেকে ১৫০ সে.মি. উপরে গাছের ব্যাসের ৩ ভাগের ২ ভাগ পরিমাণ স্থান অর্ধবৃত্তাকারে কেটে দিতে হবে । এখন ঠেকা দেয়া বাঁশের গোড়া আস্তে আস্তে দূরে সরানো হলে কাদি নিচে নেমে আসবে । এভাবে কঁদি নাগালের মধ্যে এলে তা ধরে নামানো যাবে ।

কাঁঠাল সংগ্ৰহ

(১) গাছে উঠে বা নিচে থেকে ফলের বোটা গাছের কাণ্ড থেকে সামান্য রেখে কেটে নিতে হবে। ফল ছোট হলে এক হাতে বোঁটা ধরে অন্য হাতে চাকু বা কঁচি দিয়ে বোটা কাটা যাবে । 

(২) কাঁঠাল বড় হলে এবং উঁচুতে হলে বোটার সাথে রশি বেঁধে গাছের কাণ্ডে রশি পেঁচ দিয়ে ফলের ঝুলন্ত ভারের সমতা আনতে হবে । তারপর রশির একমাথা ধরে ফলের বোটা কেটে দিতে হবে। এরপর রশি আস্তে আস্তে ঢিলা দিলে কাঁঠাল নিচে নেমে যাবে। 

(৩) ফল পাকা অবস্থা হলে থলের মধ্যে কাঁঠাল ভর্তি করে থলের মুখে রশি বেঁধে ২নং ক্রমিকে বর্ণিত নিয়মে ফল পাড়তে হবে । 

আনারস সংগ্রহ

(১) ছোট বাগান হলে ফলের বোটার নিচে কাণ্ড কেটে ঝুড়িতে সাজিয়ে আনা হয় । 

(২) বড় বাগান বা পাহাড়ি এলাকার বাগান হলে ফল তুলে বেল্টের ঝুড়িতে সাজানো হয় । যান্ত্রিক উপায়ে বা হাতের সাহায্যে বেল্ট ঘুরায়ে দূরে নির্দিষ্ট স্থানে পাঠানো হয় 

লিচু সংগ্ৰহ 

(১) লাঠির মাথায় তুকসহ বাঁধা থলিতে লিচুর গাছো ঢুকায়ে টান দিলে কিছুটা কাণ্ডসহ ভেঙ্গে আসবে । 

(২) হাতের নাগালের মধ্যে হলে লিচুর গাছোসহ ধরে মাচেড় দিলে কিছুটা কাণ্ড সহ ভেঙ্গে আসবে । 

(৩) লম্বা লাঠির মাথায় আংটার মত করে লাহোর বা কাঠের টুকরা বেঁধে লিচুর গাছোসহ ডালে বাধায়ে টান দিলে ডালসহ ভেঙে আসবে । এ সময় আংটায় বাধানো ভাঙা ডালসহ লিচুর গাছো কাছাকাছি এনে ঝুড়িতে রাখতে হবে । 

নারিকেল সংগ্রহ 

(১) নারিকেল ঝুনা হলে গাছে উঠে ছড়ার সাথে রশির একমাথা শক্ত করে বঁধতে হবে। রশির অপর মাথা গাছের মাথার সাথে পেঁচ দিয়ে ধরতে হবে। তারপর কাদি কেটে দিয়ে আস্তে আস্তে রশি ঢিলা করা হলে নিচে নেমে আসবে।

(২) নারিকেলের ছড়ার ভেতর দিয়ে প্যাঁচ দিয়ে রশির একমাথা গাছের মাথায় অর্থাৎ নারিকেলের ছড়ার উঁচুতে বঁধতে হবে । এরপর রশির অপর মাথা কমপক্ষে ৪৫ ডিগ্রী কোণ করে নিচে দূরে কোন খুঁটির সাথে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে । এরপর ছড়ার গোড়া কেটে দিলে রশি বরাবর ছড়া পড়ায়ে নিচে চলে আসবে।

Content added By
Promotion